বায়ুদূষণের উৎস বা কারণ:-
বায়ুদূষণ দু’ভাবে হয়–
১. প্রাকৃতিক কারণে এবং
২. অপ্রাকৃতিক কারণে অর্থাৎ মানুষের ক্রিয়া-কলাপ জনিত কারণে।
১.প্রাকৃতিক কারণঃ-
বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে বায়ু দূষণ ঘটে,যেমন-
>> অগ্ন্যুৎপাতের সময় আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধরনের দূষিত গ্যাস, ছাই ইত্যাদি;
>>জলাভূমি থেকে নির্গত মিথেন গ্যাস;
>>মরু অঞ্চল থেকে বাতাসে মিশে যাওয়া বিপুল পরিমাণে ধূলিকণা;
>>সামুদ্রিক জলভাগ থেকে বাতাসে মেশা বিপুল পরিমাণে লবনকণা;
>>অরণ্যের দাবানল;
>>বাতাসে ভাসমান ফুলের পরাগরেণু;
>>মহাকাশ থেকে আগত মহাজাগতিক ধূলিকণা;
>>মৃত উদ্ভিদ ও জীবদেহের পচনের ফলে নির্গত মিথেন হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস;
>>ভূপৃষ্ঠের মৃত্তিকা থেকে নির্গত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বায়ুদূষণের কারণ।
২. অপ্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণঃ-
>> কলকারখানা;
>> তেলশোধনাগার;
>> যানবাহন এবং;
>>তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রভৃতি থেকে নির্গত বিপুল পরিমাণে দূষিত গ্যাস,ছাই, ধোঁয়া প্রভৃতি;
>> পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও দূষিত গ্যাস;
>>খনি থেকে নির্গত ধূলিকণা;
>>বিভিন্ন যন্ত্রে ব্যবহৃত ক্লোরোফ্লোরো কার্বন গ্যাস।
>>গৃহস্থালির জ্বালানি;
>>বিমান;
>>কৃষি বর্জ্য পদার্থ এবং;
>>শহরাঞ্চলের আবর্জনা থেকে বিভিন্ন প্রকার দূষিত গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়।
বায়ুদূষণের ফলাফল বা প্রভাবঃ-
বায়ুদূষণের ফলে পরিবেশের সমূহ ক্ষতি হয় এবং মানুষের শরীর- স্বাস্থ্যের ওপরনানা রূপ ক্ষতিকর প্রক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন—
১. গ্রীনহাউস এফেক্টঃ-
বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প,ক্লোরোফ্লোরো কার্বন গ্যাসের পরিমাণ বাড়ার কারণে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ও ভবিষ্যতে বাড়বে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। একেই বলে গ্রীন হাউস এফেক্ট। বিজ্ঞানীদের মতে,এইভাবে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বেড়ে গেলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে, ফলে সমুদ্রের জল তলের উচ্চতা বেড়ে উপকূলবর্তী নীচু অঞ্চল সমূহ সমুদ্রজলে প্লাবিত হবে এবং বাংলাদেশের মতো নিন্ম সমতলভূমি সমূহ সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে। শুধু তাই নয়,উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে মরুভূমির আয়তন বাড়বে এবং বৃষ্টিপাত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এর ফলে সারা বিশ্বজুড়ে কৃষিকাজ শিল্পকর্ম ইত্যাদি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২. অ্যাসিড বৃষ্টিঃ-
বায়ুমন্ডলে ভাসমান সালফিউরিক অ্যাসিড,নাইট্রিক অ্যাসিড প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থকণা যখন বেশি মাত্রায় বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে ভূপৃষ্ঠে পড়ে,তখন তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে।
৩.ওজোন স্তরের বিনাশঃ-
স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যে ওজোন গ্যাসের স্তর থাকায় সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে না ।কিন্তু বর্তমানে বায়ুমন্ডলে ক্লোরোফ্লোরো কার্বন জাতীয় এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান বেড়ে যাওয়ায় ওজোন স্তরের সমূহ ক্ষতি হচ্ছে এবং কিছু স্থানে ওজোন স্তরের ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে আল্ট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ভূপৃষ্ঠে এসে পরছে। এর ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
৪. মানুষের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাবঃ-
দূষিত বায়ু মানুষের শরীর-স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। বায়ু দূষিত হলে রক্তে অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা কমে যায়; মাথাধরা, গা-বমি,শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দেয়; চোখ গলারক্ষতি হয় এবংক্যান্সার জাতীয় রোগ সৃষ্টি হয়।
বায়ু দূষণের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।